খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক/স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের ‘উইক অব ওয়েলকাম’ শীর্ষক ৫ দিনব্যাপী একাডেমিক ওরিয়েন্টেশন আজ ৭ জুলাই (সোমবার) শুরু হয়েছে। সকাল সাড়ে ৯ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিক লিয়াকত আলী মিলনায়তনে ওরিয়েন্টেশনের প্রথম দিনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন উপাচার্য প্রফেসর ড. মোঃ রেজাউল করিম।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় হলো জ্ঞান সৃজন ও সৃষ্টিশীলতার কেন্দ্র। এখানেই একজন শিক্ষার্থী নিজের পরিচয় ও ভবিষ্যৎ গন্তব্য নির্ধারণ করে। এই সময়টি নিজেকে গড়ে তোলার শ্রেষ্ঠ সময়। তাই শিক্ষার্থীদের উচিত আত্মজিজ্ঞাসা ও আত্মপ্রস্তুতির মধ্য দিয়ে নিজেদের লক্ষ্য নির্ধারণ করা এবং সেই লক্ষ্যে অবিচল থাকা।
তিনি আরও বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় একটি ব্যতিক্রমী উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানে ছাত্ররাজনীতি না থাকলেও শিক্ষার্থীরা সমসাময়িক রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপট সম্পর্কে সচেতন। যার উদাহরণ আমরা ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ এ দেখতে পেয়েছি। আমাদের শিক্ষার্থীরা জুলাই অভ্যুত্থানে যে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব দিয়েছে, তা প্রমাণ করে যে তারা দেশ, সমাজ ও সময়ের প্রেক্ষিতে কতটা দায়বদ্ধ এবং সজাগ। এছাড়া একই একাডেমিক ক্যালেন্ডার অনুসরণ করায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সেশনজটে পড়তে হয় না। ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তারা শিক্ষাকোর্স সম্পন্ন করতে পারে।
উপাচার্য বলেন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শুধু পাঠ্যসূচিভিত্তিক শিক্ষার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং সহশিক্ষামূলক কার্যক্রমেও আমরা সমান গুরুত্ব দিয়ে থাকি। নেতৃত্ব বিকাশ, ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক চর্চা, স্বেচ্ছাসেবামূলক কর্মকাণ্ডসহ নানা রকম সাংগঠনিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে বিকশিত হওয়ার সুযোগ পায়।
তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর শিক্ষার্থীরা একটি বড় ধরনের শিক্ষাগত ও মানসিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। এই রূপান্তর অনেক সময় তাদের মধ্যে হতাশা বা মানসিক অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে। আমরা এ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছি এবং শিক্ষকদের মাধ্যমে নিয়মিত কাউন্সেলিং কার্যক্রম পরিচালনার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। একইসাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টারে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ নিয়োগের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে।
উপাচার্য শিক্ষার্থীদের সতর্ক করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবন যেমন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেয়, তেমনি ভুল পথে পরিচালিত হওয়ার আশঙ্কাও থেকে যায়। অসৎ সঙ্গ, মাদক, র্যাগিং ও অন্যান্য অনৈতিক কর্মকাণ্ড শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ ধ্বংস করতে পারে। এসব বিষয় থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে।
এর আগে উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথা অনুসারে নবাগত শিক্ষার্থীদের শপথ বাক্য পাঠ করান। উক্ত শপথবাক্যে সন্ত্রাস, ছাত্ররাজনীতি, র্যাগিং ও মাদককে না বলার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। একই অনুষ্ঠানে নতুনভাবে মুদ্রিত স্টুডেন্ট হ্যান্ডবুকের মোড়ক উন্মোচন এবং তা শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করা হয়।
আইকিউএসির পরিচালক প্রফেসর ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও বক্তব্য রাখেন বিজ্ঞান প্রকৌশল ও প্রযুক্তিবিদ্যা স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. মোঃ আশরাফুল আলম, শিক্ষা স্কুলের ডিন (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মোঃ ইমদাদুল হক ও জীববিজ্ঞান স্কুলের ডিন প্রফেসর ড. মোঃ গোলাম হোসেন।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন আইকিউএসির অতিরিক্ত পরিচালক ড. এস এম তৌহিদুর রহমান।
অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আইকিউএসির উপ-রেজিস্ট্রার মোঃ নুরুল ইসলাম সিদ্দিকী। অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট ডিসিপ্লিনসমূহের প্রধানবৃন্দ এবং নবাগত শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর উপাচার্য রিসোর্স পারসন হিসেবে ‘কপিং এন্ড থ্রাইভিং ইন হায়ার এডুকেশন এনভায়রনমেন্ট’ শীর্ষক একটি টেকনিক্যাল সেশন উপস্থাপন করেন। এতে তিনি ‘আন্ডারস্ট্যান্ডিং দ্য ইউনিভার্সিটি এনভায়রনমেন্ট’, ‘কমিটমেন্ট’, ‘পারসোনাল এন্ড একাডেমিক গোলস’, ‘বিল্ডিং সোশ্যাল কানেকশন’, ‘টাইম ম্যানেজমেন্ট’ এবং ‘ফিন্যান্সিয়াল সাপোর্টস’ বিষয়ে আলোকপাত করেন।
এ ছাড়াও আইকিউএসির অতিরিক্ত পরিচালক প্রফেসর ড. মোঃ সালাউদ্দীন, আইসিটি সেলের পরিচালক প্রফেসর ড. শেখ আলমগীর হোসেন, সহকারী ছাত্র বিষয়ক পরিচালক ড. তারেক বিন সালাম, সমাজবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের প্রফেসর মোছা. তাছলিমা খাতুন, বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন হলের প্রভোস্ট প্রফেসর ড. মোঃ সফিকুল ইসলাম রিসোর্স পারসন হিসেবে টেকনিক্যাল সেশন উপস্থাপন করেন।
একাডেমিক ওরিয়েন্টেশনের প্রথম দিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থাপত্য, কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, নগর ও গ্রামীণ পরিকল্পনা, ইলেক্ট্রনিক্স এন্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং, গণিত এবং শিক্ষা ডিসিপ্লিনের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন।
খুলনা গেজেট/এনএম